মেবল নরম্যান্ড
মেবল নরম্যান্ড (ইংরেজি: Mabel Normand; ১০ই নভেম্বর, ১৮৯২[১] - ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৩০) ছিলেন একজন মার্কিন নির্বাক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক। তিনি নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের জনপ্রিয় তারকা ছিলেন এবং ম্যাক সেনেটের কিস্টোন স্টুডিওজের চলচ্চিত্রের সহকর্মী ছিলেন।[২] ১৯১০ এর দশকের শেষের দিকে ও ১৯২০ এর দশকের শুরুর দিকে তার কর্মজীবনের শীর্ষে অবস্থানকালে তিনি নিজেই চলচ্চিত্র স্টুডিও ও প্রযোজনা কোম্পানির মালিক হন।[৩] পর্দায় তিনি চার্লি চ্যাপলিনের সাথে ১২টি সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং রস্কো আর্টবাকলের সাথে ১৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। চ্যাপলিনের সাথে তার কয়েকটি চলচ্চিত্র তিনি রচনা ও পরিচালনাও করেন।[৪]
মেবল নরম্যান্ড | |
---|---|
Mabel Normand | |
জন্ম | নিউ ব্রাইটন, নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ১০ নভেম্বর ১৮৯২
মৃত্যু | ফেব্রুয়ারি ২৩, ১৯৩০ মনরোভিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৩৭)
মৃত্যুর কারণ | যক্ষ্মা |
সমাধি | কালভেরি সিমেট্রি, লস অ্যাঞ্জেলেস |
জাতীয়তা | মার্কিন |
অন্যান্য নাম | মেবল নরম্যান্ড-কোডি, মুরিয়েল ফোর্টেস্ক |
পেশা | অভিনেত্রী, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক |
কর্মজীবন | ১৯১০–১৯২৭ |
দাম্পত্য সঙ্গী | লিউ কোডি (বি. ১৯২৬) |
১৯২০ এর দশকে বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারিতে তার নাম যুক্ত হয়, যার মধ্যে রয়েছে ১৯২২ সালের উইলিয়াম ডেসমন্ড টেলরের হত্যাকাণ্ড এবং ১৯২৪ সালে কোর্টল্যান্ড এস. ডাইনসের উপর গুলিবর্ষণ। নরম্যান্ডের ভৃত্য নরম্যান্ডের পিস্তল দিয়ে ডাইনসকে গুলি করেছিল। তিনি কোন অপরাধের সন্দেহভাজন ছিলেন না। তিনি ১৯২৩ সালে ঘন ঘন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন, যার ফলে তার স্বাস্থ্য হানি হলে তার চলচ্চিত্র কর্মজীবন সমাপ্তির দিকে চলে আসে। তিনি চলচ্চিত্র থেকে অবসর নেন এবং ১৯৩০ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[৫][৬]
জীবনী
সম্পাদনাপ্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনানরম্যান্ড ১৮৯২ সালের ১০ই নভেম্বর রিচমন্ড কাউন্টির (বর্তমান নিউ ইয়র্ক সিটি) নিউ ব্রাইটনে এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মনাম আমেবল এথেলরেইড নরম্যান্ড বা মেবল এথেলরেইড নরম্যান্ড। নরম্যান্ডের মাতা ম্যারি "মিনি" ড্রুরি রোড আইল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন।[৭] তিনি আইরিশ বংশোদ্ভূত এবং তার পিতা ফরাসি কানাডীয়।[৮] নরম্যান্ডের পিতা ক্লোদ নরম্যান্ড ছিলেন একজন বয়স্ক নাবিকের সেইলর্স স্নাগ হার্বারে ক্যাবিনেট নির্মাতা ও ছুতার।
১৯০৯ সালে ১৬ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে আগমনের পূর্বে নরম্যান্ডে মডেল হিসেবে কাজ করেন। তাকে গিবসন গার্ল ইমেজের প্রতিষ্ঠাতা চার্লস ডানা গিবসনের আঁকা পোস্টকার্ডে এবং লোয়ার ম্যানহাটনের বাটারিক্স পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়।
স্বল্প সময়ের জন্য তিনি নিউ ইয়র্কের ভিটাগ্রাফ স্টুডিওজে প্রতি সপ্তাহে ২৫ মার্কিন ডলার পারশ্রমিকে কাজ করেন। কিন্তু ভিটাগ্রাফের প্রতিষ্ঠাতা আলবার্ট ই. স্মিথ বলেন তিনি কয়েকজন অভিনেত্রীর একজন, যার "সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ তারকা খ্যাতি" নিয়ে তিনি প্রত্যাশায় ভুল করেন।[৯]
চলচ্চিত্র কর্মজীবন
সম্পাদনাডি ডব্লিউ গ্রিফিথ পরিচালিত ১৯১১ সালের নাট্যধর্মী স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হার অ্যাওয়েকেনিং-এ প্রধান চরিত্রে তার অভিনয় গ্রিফিথের বায়োগ্রাফ কোম্পানিতে কর্মরত পরিচালক ম্যাক সেনেটের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে নরম্যান্ড সেনেটের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সেনেট পরবর্তীতে ১৯১২ সালে যখন কিস্টোন স্টুডিওজ প্রতিষ্ঠা করেন, তিনি নরম্যান্ডকে ক্যালিফোর্নিয়ায় নিয়ে আসেন। নরম্যান্ডের প্রথম দিকের কিস্টোন চলচ্চিত্রগুলোতে তাকে স্নানরত সুন্দরী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রগুলোতে অভিনয় শুরু করলে অচিরেই সেনেটের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলোর প্রধান তারকা হয়ে ওঠেন। তিনি চার্লি চ্যাপলিন ও রস্কো "ফ্যাটি" আর্বাকলের সাথে প্রায় ত্রিশটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, এবং অলিভার হার্ডি ও বরিস কার্লফের সাথে কাজ করেন। এছাড়া তিনি স্ট্যান লরেল পরিচালিত র্যাগেডি রোজ-এ অভিনয় করেন।
টেলর হত্যাকাণ্ড
সম্পাদনাপরিচালক উইলিয়াম ডেসমন্ড টেলর ও নরম্যান্ডের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। লেখক রবের গিরুর মতে, টেলর গভীরভাবে নরম্যান্ডে প্রেমে পড়েন। নরম্যান্ডে নিজেই তার কোকেইনের প্রতি আসক্তির নিরাময়ের জন্য টেলরের কাছে গিয়েছিলেন। গিরুর মতে, টেলর তার মৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে ফেডারেল প্রসিকিউটরদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং নরম্যান্ডের কোকেইন সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহায্য চান। গিরু ধারণা করেন নরম্যান্ডের কোকেইন সরবরাহকারীরা এই সাক্ষাতের বিষয়টি জানতে পারে এবং ভাড়াটে খুনি দিয়ে তাকে হত্যা করায়। গিরুর মতে, নরম্যান্ড টেলরের হত্যাকাণ্ডের জন্য সন্দেহভাজন ছিলেন, কিন্তু তিনি খুনির পরিচয় জানতেন না।[১০]
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯২৬ সালে তিনি অভিনেতা লিউ কডিকে বিয়ে করেন। কডির সাথে তিনি ১৯১৮ সালে মিকি চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন।[১১] তারা বেভারলি হিলসে পাশাপাশি বাড়িতে আলাদা থাকতেন। যক্ষ্মার কারণে নরম্যান্ডের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। পটেঞ্জার স্যানিটরিয়ামে দীর্ঘদিন থাকার পর তিনি ১৯৩০ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি তিনি ৩৭ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার মনরোভিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।[১২] তাকে লস অ্যাঞ্জেলেসের কালভারি সমাধির মেবল নরম্যান্ড-কডিতে সমাহিত করা হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Lefler, Timothy Dean (মার্চ ২৩, ২০১৬)। Mabel Normand: The Life and Career of a Hollywood Madcap। আইএসবিএন 9780786478675।
- ↑ Harper Fussell 1992, পৃ. 50–52।
- ↑ Harper Fussell 1992, পৃ. 71–73।
- ↑ Harper Fussell 1992, পৃ. 64–70।
- ↑ Review Mabel Normand A grand Nephew's Memoir Normand, Stephen, September 1974
- ↑ Ward Mahar, Karen (২০০৬)। Women Filmmakers in Early Hollywood। JHU Press। পৃষ্ঠা 131। আইএসবিএন 0-8018-8436-5।
- ↑ Rhode Island State Census, 1875
- ↑ Sherman, William Thomas। "Mabel Normand: An Introductory Biography"। mm-hp.com। জুন ১৫, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ Smith, Albert E. in collaboration with Phil A. Koury, "Two Reels And A Crank", Garden City, N.Y.: Doubleday and Company, Inc., 1952.
- ↑ Robert Giroux, A Deed of Death: The Story Behind the Unsolved Murder of Hollywood Director William Desmond Taylor, Alfred A. Knopf, New York, 1990.
- ↑ ম্যাকেফ্রি, ডোনাল্ড ডব্লিউ.; জ্যাকবস, ক্রিস্টোফার পি. (১৯৯৯)। Guide To the Silent Years of American Cinema। গ্রিনউড পাবলিশিং গ্রুপ। পৃ. ৮৪। ISBN 0-313-30345-2।
- ↑ ভোজেল, মিশেল (২০০৭). Olive Thomas: The Life and Death of a Silent Film Beauty। ম্যাকফারল্যান্ড। পৃ. ৯। ISBN 0-7864-2908-9।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে মেবল নরম্যান্ড (ইংরেজি)
- টার্নার ক্লাসিক মুভিজ ডেটাবেজে মেবল নরম্যান্ড (ইংরেজি)
- Mabel Normand ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে at the Women Film Pioneers Project
- Madcap Mabel: Mabel Normand Website ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে
- Mabel Normand Source Book (pdf file)
- Stephen Normand's website ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ নভেম্বর ২০১২ তারিখে
- Bibliography
- Looking for Mabel Normand ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে
- Mabel Normand Home Page
- Films of Mabel Normand on YouTube (playlist)